শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেছেন

এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেছেন

এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেছেন

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

 

 

২৯৯ বার পড়া হয়েছে

প্রিয় পাঠকঃজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদক পাওয়া বরেণ্য অভিনেতা, লেখক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা ও পরিচালক এটিএম শামসুজ্জামান শনিবার সকাল ৯টায় সুত্রাপুরে নিজ বাসভবনে (১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ – ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১) ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, ‘এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসা¤প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক বার্তায় বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শনের জন্য মরহুম শামছসুজ্জামান দেশের জনগণের অন্তরে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্ষণজন্মা এই অভিনেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি যুগেরও অবসান হলো বলে অনেকে মনে করেন। মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দারাসহ চলচ্চিত্রাঙ্গনের লোকজন তার বাড়ির সামনে জড়ো হতে শুরু করে। তিনি দীর্ঘদিন বাস করছেন সূত্রাপুরের নিজের এই বাড়িতেই। প্রতিবেশী আর দীর্ঘদিনের বন্ধুদের সঙ্গে তাই তার স্মৃতিও অনেক। সেই স্মৃতিগুলোকেই বুকে জড়িয়ে অশ্রæসিক্ত চোখে এসেছেন সবাই। সূত্রাপুরে এটিএম শামসুজ্জামানের বাড়ির সামনে আসা প্রতিবেশীরা গণমাধ্যমকে জানান, সূত্রাপুরের নিজ বাড়িতেই কেটেছে তার জীবনের বিরাট একটি সময়। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন তারকা হলেও প্রায় জরাজীর্ণ এই বাড়িতে থাকতে সংকোচবোধ করেননি কোনোদিন। জীবনযাপনে ছিলেন একেবারেই সাদামাটা।
নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন তিনি। পীর সাহেবের সিদ্ধান্তই তাই মেনে শেষ ইচ্ছাগুলো জামাতা আর ভাইয়ের কাছে জানিয়েছিলেন ১১ বার হজ করা এই অভিনেতা। এমনকি মৃত্যুর আগে নিজের কক্ষ থেকে সব অর্জন আর পুরস্কার সরিয়ে ফেলতে বলেছিলেন তিনি। শেষ ইচ্ছায় বলেছিলেন, পীর সাহেব যেভাবে নির্দেশনা দেবেন সেভাবেই সব হবে। অন্য কোথাও নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সে অনুসারে নারিন্দা পীর সাহেব জামে মসজিদে জোহরের পর তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হবে বড় ছেলের কবরের পাশে।
এটিএম শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। রক্তে অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় গত বুধবার সকালে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। তার শ্বাসকষ্ট দেখে চিকিৎসকেরা প্রথম দিকে ধারণা করেছিলেন, এ টি এম শামসুজ্জামান করোনায় আক্রান্ত। পরে পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়। ফলাফলে জানা যায় করোনা নেগেটিভ। এ ছাড়া দুই দিনের চিকিৎসায় তার শারীরিক সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। অবস্থা কিছুটা ভালো হলে শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়া হয়। বাসায় আসার ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। অভিনয়ের সব্যসাচি হিসেবে পরিচিত এই অভিনেতা ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সময় তিনি আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
কিংবদন্তি এই অভিনেতা ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তিনিও নানা রোগে ভুগছেন।
এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধূরির বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। তিনি চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেন ‘জলছবি’র। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।

অভিনেতা হিসেবে প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনূর-রিয়াজ জুটি অভিনীত ‘এবাদত’ ছবিটি।

ট্যাগ :

আরো পড়ুন