শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে পরিবেশ দূষণ

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 

 

৩৫০ বার পড়া হয়েছে

শাহীন রাসেল:

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে একটি পোল্ট্রি ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্যে ৪০ শতক জমির আবাদ করা যাচ্ছে না। একই সাথে ১৫ একর ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। দূর্গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা সহ চরম দূর্ভোগে পড়েছে পথচারী, মসজিদের মুসল্লি ও পাশ্ববর্তী স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।

রেহাই পাচ্ছে না আমসহ বিভিন্ন জাতের বনজ গাছের বাগানও। সামান্য বৃষ্টি হলেই বর্জ্যে সয়লাব হয়ে যায় ফসল ও গাছপালা। বর্জ্যের দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির মাধ্যমে বাড়ছে রোগ-বালাই। বার বার অভিযোগের পরও কোনো সুরাহা হয়নি। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস আর তালবাহানায় কেটে গেছে গ্রায় দুই বছর।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৈষকুম এলাকার হাসান তালুকদারের পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্যে অবাধে ছেড়ে দিচ্ছে পাশের কৃষি জমিতে। ফার্মের দক্ষিন দিকে রামু-গর্জনিয়া সড়কের পাশেই তৈরি করে রেখেছে বিশাল বড় একটি বর্জ্যের খোলা গর্ত। এখানে পড়ছে পোল্ট্রির বর্জ্য, মরা মুরগি, পচা ডিম। এগুলো গর্তের পানিতে পচে আশপাশের ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এছাড়াও মৈষকুম জামে মসজিদ, ওসমান সরওয়ার আলম চৌঃ প্রথমিক বিদ্যালয়সহ ওই এলাকার শিক্ষার্থী এবং গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নসহ ও রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়।
পঁচা বর্জ্যে পানির সাথে মিশে প্রায় অর্ধশত বিঘা কৃষি জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। দূষিত পানি কৃষকের পায়ে লাগলে ঘা ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কৃষি জমিতে ফসল রোপন করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এই ভয়ে কৃষি জমিতে ফসল আবাদ বন্ধ করে দিয়েছে কৃষকরা।

এলাকাবাসী জানায়, ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মৈষকুম গ্রামে গড়ে উঠেছে হাসান তালুকদারের পোল্ট্রি ফার্ম। এই পোল্ট্রি ফার্মে মোট দুটি শেড রয়েছে। প্রতি শেডে ২ হাজার করে মুরগী। এসব মুরগী প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ মে.টন বিষ্ঠা ত্যাগ করে। মুরগির এসব বিষ্ঠা রক্ষাণাবেক্ষণ এবং পরিবহনের জন্য ফার্মের কোনো আধুনিক ব্যবস্থা নেই। ফার্মের নিচে এবং পাশের খোলা জায়গায় মজুদ রাখা এসব বিষ্ঠা।

সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে এসব বিষাক্ত বিষ্ঠা পানিতে মিশে ফার্মের আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম এবং ফসলের ক্ষেতে ছড়িয়ে গেছে। এতে মৈষকুম গ্রামের ৩২ কৃষকের প্রায় ১৫ একর ফসলের ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কোন প্রচীর নেই, নিচের অংশ দিয়ে ফার্মের পঁচা, বিষ্ঠা ও বিষাক্ত বর্জ্যে ছেয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই এলাকার ক্ষুদ্র কৃষকরা। একমাত্র ড্রেনটিও, নিচের ফসলি জমির দিক করে ছেড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে, মশা-মাছি বাড়াসহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। রোগ বালাই লেগেই আছে খামারের চারপাশের শিশু-বৃদ্ধসহ তিন গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের। এছাড়াও ফার্মের সাথে লাগোয়া জাফর আলম নামের এক কৃষকের ৪০ শতক ফসলী জমি গত দুই বছর ধরে আবাদ করা যাচ্ছেনা।

পূর্ব কাউয়ারখোপ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র কৃষক জাফর আলম বলেন, ক্ষেতের পাশে যে সীমানা প্রাচির রয়েছে সেখানেই তারা খোলা অবস্থায় মুরগির বিষ্ঠা রেখেছেন। সেই বিষ্ঠা আমাদের জমিতে এসে জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গত দুই বছর ধরে ৪০ শতক জমি আর আবাদ করতে পারছিনা। যা থেকে প্রতি বছর আমার দেড় থেকে দুই লাখ আয় হতো।

স্থানীয় কৃষক মালেকুজ্জামান, ফরিদ, ছৈয়দ আহাম্মদ, হেডম্যান শুক্কুর ও আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন বলেন, এই পোল্ট্রির বর্জ্যের কারণে আমাদের আশেপাশের শত শত বিঘা ধানের জমিতে চাষ করতে পারছি না। এমন আরও অনেকে তাদের জমিতে চাষ করতে পারছে না।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, ফার্মের বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে আশপাশের একাধিক কৃষকের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করছি।

অভিযুক্ত হাসান তালুকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, এই পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য খোলা জায়গায় ফেলে কি না তা তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন জায়গায় পোল্ট্রির বর্জ্য ফেলা যাবে না। আমরা খামারিদের নির্দিষ্ট গর্ত ব্যবহারে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

  • Sorry. No data so far.

  • Sorry. No data so far.

আরো পড়ুন