আনোয়ারা আলমঃ
কন্যা দিবস পালিত হলো।পিতা ও মাতারা পরম আদরে ও গর্বে কন্যাদের ছবি পোস্ট করছেন।আমার মহীয়সী মায়ের কথা মনে পড়ে বারেবারে। পরপর চার কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার কারণে মায়ের কি কষ্ট, যন্ত্রণা আর আত্মীয়স্বজনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য। সদা বিষন্ন মায়ের সাথে বড়ো মেয়ে হিসেবে আমিও। আমাকে আত্মীয়রা বলতেন – ” কি এক দূর্ভাগ্য নিয়ে এসেছে এই মেয়ে।পরপর চারবোন। “।গভীর অপরাধবোধের বেদনা ভেতরে কাজ করতো।শেষ বোনের নাম রাখলেন দাদা।নিজের নামের সাথে নাম রেখে।
অবশেষে এলো চাঁদের মতো ফুটফুটে এক ভাই। পুরো কাপ্তাই শহরে যেন আনন্দের বন্যা। বাবা মনে হয় পুরো শহরের লোকজনকে খাওয়ালেন। অবশেষে বংশের মুখ রক্ষা হলো।
শৈশব, কৈশোরের এই কন্যাভীতি মনে গেঁথে গেল। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িতে দেখি ছয় ভাই আর এক বোন।বোনের কি আদর!সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র।
এরপরে ও সন্তান সম্ভবা হওয়ার পরে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি পুত্র সন্তানের। নবজাতকের কান্না শুনেই ডাক্তার প্রফেসর নুরজাহান ভুঁইয়াকে ( প্রয়াত) জিজ্ঞেস করি ” ছেলে না মেয়ে? ”
তিনি বকা দিয়ে বলেন- “এটি আবার কি প্রশ্ন? ছেলে যা মেয়েও তা।”কেন এই প্রশ্ন কিভাবে বলি?
যদিও পরের সন্তানের সময় কন্যা চেয়েছিলাম।
এই পুত্র সন্তানের জন্য আকাঙ্খার পেছনে গভীর কিছু উত্তর আছে।সেদিকে যাচ্ছিনা।
তবে চাকরিকালীন সময়ে অনেক সহকর্মীর পরপর তিন মেয়ে হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ একটি পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা। ব্যতিক্রম থাকতে পারে।তবে ব্যতিক্রম কিন্তু ব্যতিক্রম ই-।(অর্থনীতির ভাষায়)
কিন্তু মেয়েরা যেভাবে মা ও বাবাকে আগলে রাখে, যত্নে রাখে তা কিন্তু পরম সৌভাগ্যের।মায়ের বন্ধু হয় মেয়ে।অসুখে মেয়েরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা ও বাবাকে যত্নে রাখে। আমার বাবা ও মা’কে আগলে রেখেছিল আমার সেজ বোন।ওর মতো আমি করতে পারিনি।
তবে আর্থিকভাবে আগলে রাখে পুত্র সন্তানেরা।এখানে ও ব্যতিক্রম আছে বা হয়।
আমার বার্তা হলো মা ও বাবার কাছে কন্যাসন্তান ও পুত্র সন্তান। দুটোই সমান। পরম আদরের। কিন্তু কঠিন সত্যি হলো এই একুশ শতকেও নানা কারণে কন্যা সন্তান অনেকের কাছে বোঝা। এটি কোনভাবে অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে অবশ্যই সমাধান আছে।এটি নিয়ে আরেকদিন কথা হবে।
পৃথিবীর সব কন্যারা আনন্দে, শান্তিতে, প্রাপ্তিতে, যত্নে ও এক বৈষম্যহীন পরিবেশে মানুষ হিসেবে বিকশিত হোক এই শুভকামনা।