প্রিয় পাঠকঃই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ-এ বিক্রি হচ্ছে বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড ও অনুমোদনহীন ডিজিটাল পণ্য। এর মাধ্যমে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। আগামী সপ্তাহে দারাজের চিফ অপারেটিং অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিআইডি। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এভাবে বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড বিক্রি অবৈধ।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনার জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর দারাজের সাইট থেকে ৫ ডলার মূল্যের বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ড কেনেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। এজন্য তাকে দারাজের নির্দিষ্ট মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হয় সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা। পরে দেখা যায় কার্ডটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের এক বাসিন্দার।
সবশেষ গত ১০ অক্টোবরও একইভাবে ভার্চুয়াল কার্ড কেনেন আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘দারাজসহ বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে বিদেশি ব্যাংকের কার্ড ইউজ করে আসলে আমি কিছু গিফট কার্ড কিনে থাকি। আমরা পেমেন্ট করে দেই বিকাশে কিংবা রকেটে। আমরা ভার্চুয়াল কারেন্সিটা পেয়ে যাই।’
সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিদেশি কার্ড কীভাবে বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে দারাজের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার এ এইচ এম হাসিনুল কুদ্দুস রুশো লিখিতভাবে জানান, এ অভিযোগ সত্য নয়। এ বিষয়ে জানতে দারাজের প্রধান কার্যালয়ে গেলে সেখান থেকেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
তদন্ত সংস্থা বলছে, এভাবেই বিদেশি ব্যাংকের ভার্চুয়াল কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন হাত ঘুরে ঘটছে বড় ধরনের অপরাধ। অপরাধগুলো হলো- অর্থ পাচার, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, মাদক ও অস্ত্র বিক্রির অর্থ পরিশোধ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ।
বিদেশি ব্যংকের দুই ধরনের ভার্চুয়াল কার্ড বিক্রি হচ্ছে। একটি হচ্ছে ফিক্সড কার্ড, অন্যটি হচ্ছে রিচার্জেবল কার্ড।
অনুমোদনহীন ভার্চুয়াল পণ্যগুলো হলো বিদেশি চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশন ফি, সফটওয়্যার অ্যাক্টিভেশন কী ও সাবস্ক্রিপশন ফি, গেম ডেভলপমেন্ট টুলস ও সফটওয়্যার ক্রয়, ইকমার্সের গিফট কার্ড এবং গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপস স্টোরের গিফট কার্ড।
তদন্ত সংস্থা বলছে, গত দুই বছরে বিদেশি ব্যাংকের অন্তত এক লাখ ভার্চুয়াল কার্ড বিক্রি করেছে দারাজ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমদানি নিষিদ্ধ বিদেশি ব্যাংকের কার্ড ও ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। ‘যদি কেউ একটা ফরেন ব্যাংকের কার্ড নিল, কার্ডটা যদি সে নিজে ইউজ না করে আবার সে অন্য কারো কাছে বিক্রি করে; সেক্ষেত্রে কোনো বিধান নেই। কিন্তু সেটা নিয়ে সে অন্য কারো কাছে রিচার্জকরণ বলেন, আবার কার্ড বিক্রি করার-এ জাতীয় বিধান কিন্তু নাই।’
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, অবৈধ এসব ভার্চুয়াল পণ্যের মাধ্যমে প্রতিবছর পাচার হচ্ছে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা।