শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩

কেবলই ধোঁয়া কালো ধোঁয়া

কেবলই ধোঁয়া কালো ধোঁয়া

কেবলই ধোঁয়া কালো ধোঁয়া

মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৩

 

 

৪২ বার পড়া হয়েছে

প্রিয় পাঠকঃরাজপথ তাকে ডেকেছে আয়, আয়। ষ্টিয়ারিং তাকে টেনেছে কাছে, আরো কাছে। মিছিল শ্লোগান নিয়েছে জনতার কাতারে। কখন কোন ফাঁকে ডিজেল পোড়া হাতে উঠে এসেছে কলম। নিরবে-নিভৃতে থেকে অবশেষে লোকালয়ে এসেছেন মকবুল আহমদ। বৃটিশ ভারত থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশÑ এই ত্রিকাল পরিদর্শী আটান্ন বছর বয়সী শ্মশ্রæমÐিত মানুষটি জন্মেছেন ১৯৩৭ সালে এদেশেরই এক সাধারণ কৃষক পরিবারে। ৫০ সালে বাড়ী ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আশ্রয় মিলেছিল নানা জায়গায়। ট্রাক দেখে সখ জেগেছিল চালক হবার। সেই থেকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরবের পথ থেকে পথে চালিয়েছেন ট্রাক, ট্রেইলার, ট্যাংক লরী, প্রাইভেট কার, স্কুটার। আশিরদশকে জড়িয়ে পড়েন পরিবহন শ্রমিক রাজনীতিতে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, ট্যাংক লরী ড্রাইভার এ্যান্ড এসিসট্যান্ট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের লদ্ধ অভিজ্ঞতায় ড্রাইভার-হেলপারদের সামাজিক মর্যাদা প্রদানসহ পরিবহন শিল্পের সমস্যা সমাধানে এখনো সোচ্চার। বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে লিখেছেন ও। আমৃত্যু লড়াইয়ে সংকল্প বদ্ধ মকবুল আহমদ।

কেবলই ধোঁয়া কালো ধোঁয়া
গাড়ীর কালো ধোঁয়ার ব্যাপারে দেশে বড় রকমের হইচই মাঝে-মাধ্যেই হয়। কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন চলতে দেয়া হবেনা Ñ এরকম সরকারী হুঙ্কার প্রায়শ শোনা যায়। যান্ত্রিক ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন এবং কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন ৩০শে মে ’৯৩ সালের পর চলতে দেয়া হবে না। এরপর থেকে রাস্তায় চলাচলকারী ত্রæটিপূর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ের কমিটি কক্ষে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটির এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, যা তথ্য বিবরণী আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পরবর্তী অবস্থার অগ্রগতি কতটুকু তার হিসাব পাওয়া না গেলেও ঐ বছরেই যানবাহনের কালো ধোঁয়া নির্গমনের মাধ্যমে রাজধানীর পরিবেশ নষ্ট করার সাথে জড়িতদের কাছ থেকে পুলিশ দেড় কোটি টাকারও বেশী জরিমানা আদায় করেছে। যানবাহন চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ সে সময় দাবী করেছিল কালো ধোঁয়া বন্ধের ব্যাপারে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ সতর্কতার সাথে কাজ করায় পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অবস্থা কি তা সবাই অবগত। কালো ধোঁয়া বাতাসে ছড়াতে ছড়াতে খোদ রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ আর বিআরটিএ অফিসের সামনে দিয়ে ছুটে চলে এখনো গাড়ী।

মাঝে-মধ্যেই কালো ধোঁয়াবিরোধী অভিযান চলে। তবে তা দ্রæত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কারণ অভিযানের ফসল আর মেলেনা। কালো ধোঁয়া বের হওয়া যানবাহন ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে জরিমানা ২ শ’ টাকার স্থলে ৫ হাজার টাকা করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রস্তাবও এসেছিল। অবশ্য এজন্য ট্রাফিক অধ্যাদেশের ধারা পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ীর জন্য সর্বোচ্চ ২ শ’ টাকা জরিমানা নির্ধারিত থাকায় মোটরযানের মালিক ও চালকরা তা দিয়ে দেন। এবং এজন্য বিষয়টিকে তুচ্ছ মনে করেন। এটা অপরাধের তুলনায় নামমাত্র দন্ড। অনেক সময় মালিক-চালক ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে নেন। এসব কারণও কালো ধোঁয়া বন্ধের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার অন্তরায়। ধোঁয়ার গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ণয়ে সরকার অনুমোদিত নিরাপদ মানমাত্রা এখনো ঘোষিত হয়নি। খসড়া তৈরী হলে তা নিয়ে তেমন আলোচনা হতেও দেখা যায়না। বেতার-টিভিতে, এমনকি সংবাদপত্রে গাড়ীর কালো ধোঁয়া সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রচার হলেও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে সমীক্ষাও চালানো হয়না।

কালো ধোঁয়া নির্গমনের অভিযোগে ’৯১ সালে ঢাকায় যানবাহনের বিরুদ্ধে ৪ শ’ ২৩টি মামলা দায়ের করে ২ লাখ ৩৫ হাজার ১ শ’ ৮৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল। ’৯২ সালে জরিমানা আদায়ের পরিমাণ ছিল ৫২ লাখ ৮ হাজার ৮ শ’ ৪৫ টাকা এবং মামলার সংখ্যা ছিল ১ শ’ ৫১ টি। আর ’৯৩ সালে ১ হাজার ৪ শ’ ৮৫ টি মামলা দায়ের করে ১ কোটি ৫৩ লাখ ১৭ হাজার ৯ শ’ ৩৫ টাকা জরিমানা আদায় করেছিল ট্রাফিক পুলিশ। গাড়ীর কালো ধোঁয়ার জন্য খোদ ঢাকা শহরে বছরে দেড় কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়, তাহলে সারাদেশে কত হতে পারে, তা ট্রাফিক কর্মকর্তারাই বলতে পারেন। ক্রমশ চলমান……

ট্যাগ :

আরো পড়ুন