শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

কর্নেল অলি’র রাজনৈতিক সংকট ও জামায়াত প্রীতি

কর্নেল অলি'র রাজনৈতিক সংকট ও জামায়াত প্রীতি

কর্নেল অলি’র রাজনৈতিক সংকট ও জামায়াত প্রীতি

বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪

 

 

১৪৯ বার পড়া হয়েছে

জাকারিয়া কাজিঃ
তত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের বয়স বাড়ানো নিয়ে (২০০৬) আওয়ামী লীগ-বিএনপি যখন রাজপথে সংঘাতে লিপ্ত, তখনই প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দীনের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমদ।পদত্যাগ পত্রে সই করার আগে রাষ্ট্রপতিকে তিনি বেগম জিয়ার সাথে একদন্ড কথা বলার সুযোগ দেননি।মামলা দিয়ে দুই নেত্রীকে রাখা হয়েছিল অস্হায়ী জেলখানায়। সংস্কারের নামে ২ বছর রংঢং পার করে নির্বাচন শেষে তিনি সেই যে নির্বাসনে গেলেন,এখনও ফেরেননি।সময় বড়ই নির্মম,কার কখন বারোটা বাজে–বলা মুশকিল।

বিএনপির সেই দুঃসময়ে কর্নেল (অবঃ) অলিকে কাছে পাননি বিএনপি। ডুবন্ত জাহাজের লাফ দেয়া ইঁদুরদের মতো ঈশানকোনে ঝড় দেখেই তিনি বিএনপি থেকে লাফিয়ে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে। শেখ হাসিনা,এরশাদ,বদরুদ্দোজাসহ বড় বড় নেতাদের সাথে বিশাল মঞ্চে দাড়িয়ে নেতার সে কি ছবি তোলার হিড়িক।
দলবদল কিংবা রাজনৈতিক গাড়ি বদল যে কোন ব্যক্তির গনতান্ত্রিক অধিকার। তিনি বিএনপিকে গুডবাই জানাতেই পারেন। কিন্ত লালদিঘি ময়দানের জনসভায় তিনি তার দুর্দিনের নেত্রী বেগম জিয়াকে যেভাবে কথার সাবান দিয়ে ধুয়ে দিয়েছিলেন,তা ছিল শিষ্টাচার বহির্ভূত, অশোভনীয়।।যার বদান্যতায় সাংসদ-মন্ত্রিত্ব,সেই নেত্রীকে সমাবেশের দর্শক দেখিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছিলেন,তা ছিল জগন্য মানসিক অত্যাচার।
কুটকৌশলে শেখ হাসিনার কৃপা পেতেই তিনি সেদিন বেগম জিয়ার উপর নির্দয় হয়েছিলেন।কথায় কথায় তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন,সহজেই ক্ষোভিত হন,কর্কষ আচরণ করেন–যা রাজনীতির পথকে পিচ্ছিল করে।তাঁর সেদিনের দম্ভোক্তিও বেশীদিন স্হায়ী হয়নি। শেখ হাসিনা তাঁকে তার কথামত একাধিক আসন ছেড়ে দিতে রাজি হননি। তিনি চরম হতাশাগ্রস্ত হন, মহাজোট ত্যাগ করেন।

কর্নেল অলি আহমেদ একজন অকুতভয় সৈনিক,বীর মুক্তিযোদ্ধা। বন্ধু জেনারেল জিয়ার হাত ধরেই এসেছিলেন রাজনীতিতে। জিয়ার মৃত্যুর পর বেগম জিয়া দল চালাতে সাহস করেননি। সাতপাঁচ না ভেবেই তিনি সর্বময় ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন এরশাদের হাতে। বেগম জিয়া সংসারমুখী হলে দলের সুযোগ সন্ধানী মওদুদরা বিএনপি ছেড়ে এরশাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। কিংকর্তব্যবিমুঢ় ছিলেন জিয়াপ্রেমিক কর্নেল অলি।অভিজ্ঞ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানরা (১৯৮৫) দলপুনঃগঠনে সক্রিয় হলে তিনি আবারও লাইম লাইটে আসেন।
সময়ের পরিক্রমায় নদীতে অনেক পানি গড়িয়েছে।জিয়ার প্রতি নিরন্কুশ সমর্থনের কারনে বারংবার তিনি খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেয়েছেন। ভাল-মন্দ পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কৌশলগত কারনে বেগম জিয়া নিবন্ধন হারানো জামায়াতকে পাশে নিতে চাইলে কর্নেল অলি বিরোধীতা করেন। তিনি চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া) আসনটি ধরে রাখার গোপন ইচ্ছায় তিনি জোটে কখনোই জামাতকে জোটে সহ্য করতে পারেননি। জোটে থাকলে এ আসনে জামায়াত কখনো ছাড় দেবেনা। এই আসন ছিল জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি।

এলডিপি নেতা কর্নেল অলি’র আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আর জামায়াতের প্রশংসা–দুটোই তার সংসদীয় আসন দখলের প্রতিচ্ছবি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আলাদা ভাবেই ৩০০আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষনায় তিনি সম্ভবতঃ বিপর্যস্ত। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে জামায়াতকে ছাড় দিয়ে হলেও তিনি জামায়াতের অনুকম্পায় চট্টগ্রাম১৩ আসনটি দখলে নিতে চান।এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী আছে বটে, তবে জামায়াতের অকুন্ঠ সমর্থন পেলে তার উতরে যাবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না।
তিনি নির্বাচন করবেন না–এমন একটা ঘোষনাও বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি সম্ভবতঃ তার ছেলেকেই সংসদ ভবনে পাঠাতে চান। চিন্তাভাবনায় লাউ আসুক কিংবা কদু আসুক–সবকিছুতেই ফ্যাক্টর কিন্তু আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলে তিনি বেকায়দায় পড়েছেন,নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলেন।আওয়ামী লীগের ভোটব্যান্ক যদি তাঁর বিপক্ষে রায় দেন,তিনি কিংবা তার সন্তান–কেউই সংসদের দরজা খুঁজে পাবেন না।

ট্যাগ :

  • Sorry. No data so far.

  • Sorry. No data so far.

আরো পড়ুন